লিডীয় জাতিই কি প্রথম ধাতব মুদ্রার প্রচলন ঘটিয়েছিলো?



পশ্চিমা বিশ্বে ধাতব মুদ্রা প্রচলন ঘটাতে অবদান রেখেছিলো সুপ্রাচীন লিডীয় জাতি।  সময়ের বিচারে লিডীয় জাতি ছিলো অনেকটাই এগিয়ে।  বর্তমান তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছিলো এই জাতি।  এশিয়া মাইনারের পশ্চিমাংশে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দি থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৬ অব্দ সময়কাল পর্যন্ত এক উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো তারা।  আর এই লিডীয় জাতীর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে ধাতব মুদ্রার প্রচলন ঘটানো। 
এসব ধাতব মুদ্রায় কোনো অক্ষর বা মুদ্রামান লেখা থাকতো না।  মুদ্রাগুলোর আকার খুব বড় ছিলো না।  সহজে বহনযোগ্য লিডীয় মুদ্রা ছিলো অনেকটা শিমের বিচির মতো।  অবশ্য, আকারে এর চেয়ে বড় মুদ্রাও ছিলো।  লিডীয়রা ৭৫ ভাগ সোনা ২৫ ভাগ রূপার সমন্বয়ে উৎপন্ন প্রাকৃতিক সঙ্কর ধাতু ইলেকট্রোমের ব্যবহার জানতো।  আর এই ইলেকট্রোম দিয়েই তারা তাদের মুদ্রা বানিয়েছিলো।  এই মুদ্রা দিয়ে পশুপাখিসহ খাদ্যবীজ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিনিময় করতো তারা।  লিডীয় মুদ্রাকে বলা হতো স্ট্যাটারাগ।  মুদ্রাগুলোর একপাশে মূর্তির ছাপ এবং অন্যপাশে থাকতো সিংহের মাথার মতো চিহ্নটি দিয়ে শৌর্যবীর্য প্রকাশ করতো এবং এই চিহ্নটিকে নিজেদের জন্য মঙ্গলজনক মনে করতো আর লিডীয় মুদ্রা তৈরির সাথে সাথে টাঁকশালেরও প্রবর্তন করেছিলো।  লিডীয় মুদ্রা বর্তমানে খুবই দুর্লভ।  গির্জার নির্দিষ্ট কবরস্থান থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে তৈরিকৃত কয়েকটি লিডীয় মুদ্রার প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ধরে নেওয়া হয় যে, সেগুলো ছিলো ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরিকৃত।  তবে লিডীয় রাজা ক্রসাসের তত্ত্বাবধানে তৈরি হতো এবিষয়ে বিতর্ক নেই।  লিডীয় জাতীর পরে গ্রিস ও সিসিলি দ্বীপে মুদ্রার প্রচলন হয়।  এটি ছিলো লিডীয় মুদ্রা উদ্ভাবনের একশ’ বছর পরের ঘটনা।  এরপর দক্ষিণ ইতালিতে এভাবে লিডীয়দের পরে ইজিয়ান, গ্রিক এবং শেষে প্রাচীন রোমানরা মুদ্রার ব্যবহার শেখে এবং নিজেরা মুদ্রা বানাতে শুরু করে।  পরে অন্যান্য ইউরোপীয় দ্বীপ ও দেশ লিডীয়দের অনুসরণ করে। 

Post a Comment

0 Comments