এই পৃথিবীতে একাকীত্বের চেয়ে জঘন্য অনুভূতি আর দ্বিতীয় নেই। শুধু মাত্র এই একাকীত্বই একটা মানুষকে শেষ করে দিতে পারে। আমরা যখন একাকী থাকি তখনই আনাদের মাথায় যতরকমের উদ্ভট আজেবাজে চিন্তা ঘুরাফেরা করে। এই একাকীত্বের কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেই অনেক যন্ত্রণাদায়ক জীবন অতিবাহিত করে চলেছি। হ্যা, এই অনুভূতির সাথে পৃথিবীর অনুভূতির কোনো তুলনা করা চলে না। তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনিই পৃথিবীতে একমাত্র একা মানুষ, তাহলে সেটা আপনার চরম ভুল। আপনার মত আরও অনেক মানুষ এই একাকীত্বের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেকেই এই একাকীত্বের কাছে পরাজিত হয়ে নিজেকে আড়াল করে নিচ্ছেন বাস্তব পৃথিবী থেকে। প্রযুক্তির সাথে সাথে আমাদের চিন্তা-ভাবনা আর জীবন ধারাও বদলাচ্ছে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে আমাদের একাকীত্বও ততো বাড়ছে। তবে এই একাকীত্ব আমাদের বয়সের সাথে সাথেই বৃদ্ধি পায়। বয়স যত বাড়তে থাকে আমাদের একাকীত্বও বাড়তে থাকে। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যেদিন মারা যাবেন সেদিন আপনার সাথে প্রায় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬৩৫ জন্ মানুষ মারা যাবে। একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি যেই পৃথিবীতে যতটা একা অনুভব করছেন সেই পৃথিবীতে আপনার মৃত্যুর সময়ও কতো মানুষ আপনাকে সঙ্গ দেবে, তাহলে আপনি একাকী কোথায়? বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমাদের ফেইসবুক, টুইটার, Whatsapp, Instagram সহ আরও অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে আমাদের ফ্রেন্ডস, ফলোয়ারের সংখ্যা আজ নিজের দেশ ছাড়িয়ে আজ বিশ্বব্যাপি। তারপরেও আমরা একাকী অনুভব করি। হয়তো আমাদের সারাটা দিনে একটাবার খোঁজখবর নেওয়ার মতো একজন মানুষের অভাব অনুভব করি। অনেকেই সারাটাদিন তাদের ফেইসবুকের নিউজফিড Scroll করে তাদের সময় কাটাতে থাকেন। কিন্তু এতে কি আমরা একাকীত্ব থেকে রেহাই পাই? না, পাই না। এতে আমাদের একাকীত্ব গুলো আরও বাড়তেই থাকে। আমরা কি পারি না, এই একাকীত্বকে গুলোকে জয় করে আমাদের দিনগুলোকে আরও সুন্দর করে তুলতে? অবশ্যই পারি। তাহলে চলুন দেখা যাক, কিভাবে আমরা আমাদের একাকীত্বগুলোকেই কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবন টাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারি।
১। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবুনঃ একাকীত্বের সময়গুলোতে আমরা আমাদের নিজেদেরকে নিয়ে ভাবতে পারি। যখন আমরা কোনো সম্পর্কে বা রিলেশনে ইন থাকি তখন আমরা নিজেদের সম্পর্কে ভাবতে পারি না। এই সম্পর্কগুলো আমাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে ভাবতে অনেক বাঁধা দেয়। যখন আপনি কোনো সম্পর্কে যুক্ত থাকবেন না তখন আপনার কোনো পিছুটানও থাকবে না, তাই আপনি স্বাধীন ভাবে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন।
২। পছন্দের কাজ করাঃ আমাদের অনেকেরই অনেক রকম পছন্দের কাজ আছে। যেমন- অনেকেই আছেন যারা ছবি আঁকতে পছন্দ করেন, কেও আছেন যারা টুকিটাকি লিখতে পছন্দ করেন। কেও কেও আবার আরও অদ্ভুত কোনো শখ বেছে নেন। সেটা যাইহোক না, এই শখ আপনাকে অনেক আনন্দ প্রদান করে থাকে। একাকীত্বের সময় কাটাতে এই শখ গুলোর কোনো জুড়ি নেই।
৩। বাস্তব চিন্তাভাবনা করাঃ আমরা সাধারণত যাদের সাথে মেলামেশা করি, আমরা ভাবতে থাকি হয়তো তারা আমাদের সাথে সারাজীবন আমাদের সাথে এমন ভাবেই থাকবে। আসলে কিন্তু এরকমটা হয়না। আমাদের এই প্রিয় মানুষগুলোকেও বদলে যেতে হয়, তাদের সময়ের প্রয়োজনে। কিন্তু আমরা এগুলো মেনে নিতে পারি না। কিন্তু আমাদেরকে এটা মেনে নিতে হবে, কেওই চিরদিন আমাদের সাথে থাকবে না। আমাদের জীবন আমাদেরকে একাই পাড়ি দিতে হবে। জীবনের কিছু কিছু সময়ে আমাদের সাথে কিছু মানুষ কিছুক্ষণ সময় থাকবে আবার চলে যাবে। ভাবতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তব। এটাকে যে যত তাড়াতাড়ি মেনে নিতে পারে সে তত তাড়াতাড়ি সফল হতে পারে। তাই বাস্তব টাকে মেনে নিন আর নিজেকে বদলে ফেলুন এই বাস্তবতার সাথে।
৪। বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুনঃ আমি মনে করি, পৃথিবীতে যত রকমের অভ্যাসই থাকুক না কেন, বই পড়ার এই অভ্যাস সবচাইতে উত্তম। আমার সবচাইতে প্রিয় এই অভ্যাস, যা আমাকেও বদলে দিয়েছে। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমার কথা হয়তো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনাদের। না, আমি কোনো একাডেমিক বই পড়ার কথা বলছি না। একাডেমিক বই পড়তে গিয়ে আমরা একেবারে একঘেয়ে হয়ে গেলেও আমরা নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে মোটেও বিরক্ত হই না। আমাদের মধ্যে অনেকেই অনেক বিষয় নিয়ে পড়তে পছন্দ করি। আমাদের অনেকের অনেক রকম পছন্দের চরিত্র আছে, যেমন- অনেকেই পছন্দ করেন হুমায়ুন আহমেদের হিমু, মিসির আলি। আবার কেও কেও রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল বা শরৎচন্দ্রের অথবা জুলভার্ন এর লেখা কোনো বই। কেও কেও আবার রহস্য উপন্যাস যেমন- ফেলুদা, ব্যোমকেশ বকশী অথবা Sherlock Holmes এর মতো গোয়েন্দা সিরিজ। এগুলো শুধু আপনার আনন্দই দেবে না, এর সাথে সাথে আপনার জ্ঞানের পরিধি আর মস্তিকের বিকাশেও অনেক সাহায্য করবে। যত বেশি আপনি বই পড়বেন ততই আপনার কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পাবে। একবার নিজেই চেষ্টা করতে করে দেখতে পারেন। কারণ পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষও আছেন যাদের একাকীত্বের মাঝে তাদের বেঁচে থাকবার একমাত্র খোরাক এই বইগুলি। তাহলে চলুন না একবার চেষ্টা করে দেখি।
৫। আপনজনদের বেশি বেশি সাথে সময় কাটানঃ পৃথিবীতে নিজের পরিবারের মতো আপনার আপন অন্য কোনোকিছু হতে পারে না। তবে আপনি যদি আপনার পরিবার ও আপনজনদের কে Avoid (এড়িয়ে) করে চলেন তাহলে এক সময় দেখবেন আপনি আপনার পরিবারের সাথে অনেকটা দূরত্বই তৈরি করে ফেলেছেন। অনেকেই আছেন একাকীত্বের জন্য নিজের পরিবার ও আপনজনদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন, এতে কি আদৌ আপনার একাকীত্ব লাঘব হয় নাকি আরও বেড়ে যায়? আপনি আপনার পরিবারের সাথে যত বেশি সময় কাটাবেন ততই আপনার একাকীত্বটাকে আপনি দূরে সরাতে পারবেন।
সবশেষে একটা কথা বলবো, আপনি হয়তো যখন কোনো Couple বা প্রেমিক যুগলকে দেখবেন আপনার হয়তো মনের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু এটা আপনার মনে কয়েক মুহূর্তের জন্য একটা প্রভাব ফেললেও এটা কোনো ব্যাপার না। বিশ্বাস করুন, একাকীত্ব মোটেও খারাপ কিছু না, অনেক ভালো, যদি আপনি এর সঠিক ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এই একাকীত্বই আপনার নিজেকে অন্যরকম ভাবে Explore করতে সাহায্য করে। পরিশেষে, হারকিউলিসের একটা উক্তি না দিয়ে পারলাম না, তিনি বলেছেন, - Sometimes it's better to be alone. No one can heart you. অর্থাৎ, কখনও কখনও আপনার একা থাকা উচিত। তাহলে কেও আপনাকে আঘাত করতে পারবে না।
তাহলে পাঠকবৃন্দ, চলুন আমাদের একাকীত্বকে জয় করে আমাদের একটা সুন্দর জীবন গড়ে তুলি।




0 Comments