Depression থেকে বেরিয়ে আসবেন কিভাবে? - How to Overcome Depression.


পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ যে ভয়ানক মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত তার নাম হলো “ডিপ্রেশন”।  আমাদের চারপাশের অনেক মানুষের ভিতরেই এই সমস্যা দেখা যায়।  আর এটি এমন এক সমস্যা যা ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে।  আমাদেরকে আস্তে আস্তে শেষ করে দেয়।  আমাদের সবার জীবনেই ছোটখাটো অনেক সমস্যা থেকে থাকে।  প্রতিদিন একেকটা সমস্যায় আমরা জড়িয়ে পড়ি।  কারো কারো সংসারে ঝামেলা, কারো চাকরীতে ঝামেলা, পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ, প্রিয়জনেরর সাথে ব্রেকাপ ইত্যাদি নানান ধরণের সমস্যা আমাদের লেগেই থাকে।  আর এসবের থেকেই তৈরি হয় ডিপ্রেশন বা হতাশা। 


ডিপ্রেশন কেন হয়?

ডিপ্রেশন হওয়ার কারণ বুঝতে হলে আগে আমাদেরকে কিছু সাইকোলজি জানতে হবে।  আমাদের সবার মস্তিষ্কে কিছু স্মৃতি থাকে, কিছু স্বপ্ন থাকে আবার কিছু ভালোলাগা ও অভ্যাস থাকে।  যখন আমাদের অতীতের কোনো স্মৃতি বার বার মনে হতে থাকে তখন আমরা ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনের দিকে যেতে যেতে থাকি।  আবার যখন আমাদের কোনো স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় তখন আমরা ডিপ্রেশনে চলে যায়।  আমাদের অনেক স্বপ্ন থাকে, যেমন- আমার এটা থাকবে, ওটা থাকবে, আমি এটা করবো সেটা করবো, আমি ওকে বিয়ে করবো ইত্যাদি ইত্যাদি।  কিন্তু হুট করেই যখন এই স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে যায় তখন আমরা ডিপ্রেশনে ভুগতে আরম্ভ করি।  অর্থাৎ ছোট ছোট মন খারাপ থেকে হতাশার জন্ম হয় আর এই হতাশা যদি আমরা কাটাতে না পারি তখন সেটা আমাদের ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  আর ডিপ্রেশনকে প্রশ্রয় দিলে আস্তে আস্তে সেটা বাড়তেই থাকে।  এখন এটা স্পষ্ট যে, আমাদের ডিপ্রেশন আমাদের অতীতের কারণেই ঘটে থাকে।  বর্তমান অবস্থায় থেকে কেউ কখনও ডিপ্রেশনে যেতে পারে না। 

ডিপ্রেশনের পরিণতি কি?

মানুষের যখন মন খারাপের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন মানুষ হতাশায় ভুগতে থাকে, আর অতিরিক্ত হতাশা ডিপ্রেশনকে জন্ম দেয়।  আর কেও যদি এই ডিপ্রেশনকে প্রশ্রয় দিতে থাকে অর্থাৎ ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা না করে তবে সেটা আস্তে আস্তে প্রাণঘাতি হয়ে ওঠে।  এমন অনেকেই ডিপ্রেশন থেকে সুইসাইড বা আত্মহত্যা করে ফেলেন। 



কিভাবে মুক্তি পাবেন ডিপ্রেশন থেকে?

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে আপনাকে খুজে বের করতে হবে আপনার ডিপ্রেশনের কারণ টা কি? আপনার মন খারাপ কেন? কেন আপনি এতোটা হতাশ? যদি আপনার হতাশার কারণ চাকরিতে হয়ে থাকে অর্থাৎ আপনার প্রমোশন হচ্ছে না বা এরকম কিছু তাহলে হতে পারে তার কারণ আপনার কাজের প্রতি অবহেলা বা আপনি সুষ্ঠু ভাবে কাজ করেও আপনার প্রমোশন পাচ্ছেন না তাহলে তার কারণ হতে পারে, আপনি কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু আপনার কাজের ফলাফল আপনি ঠিকমতো বসের সামনে Show করতে পারছেন না ইত্যাদি।  যদি আপনার হতাশা পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণে হয়ে থাকে তাহলে তার কারণ হতে পারে আপনি হয়তো ঠিকমতো পড়াশুনা করেন নি অথবা পড়াশুনার সময় অমনোযোগী ছিলে।  আপনার যদি ব্রেকাপের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তার কারণটা একবার বোঝার চেষ্টা করুন।  হতে পারে তার কারণ, আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে ঠিকমতো সময় দেন নি, অথবা সে আপনাকে অবহেলা করতো সেটা আপনি কখনো খেয়াল করেন নি অথবা খেয়াল করলেও সেটা গুরুত্ব দেন নি।  অর্থাৎ প্রথম কথা হলো আপনাকে আপনার সমস্যা ও তার কারণ আগে বের করতে হবে।  কিন্তু তার পরে কি করবেন? সেগুলো থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন? যদি আপনি আপনার চাকরিতে ব্যর্থ হন নিজেকে প্রমোট করতে তাহলে নিজের কাজের প্রতি আরও সচেতন হোন, নিজের কাজকে আরও সুষ্ঠু ভাবে করার চেষ্টা করুন এবং নিজের কাজের ফলাফল আপনার বসকে জানান, নিজের ছোটখাটো ভুল গুলোকে শুধরে ফেলার চেষ্টা করুন।  আপনার পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে তার কারণ আপনি পরীক্ষার আগে ঠিকমতো পড়াশুনা করেন নি।  অথবা পড়াশুনা করলেও মনোযোগ দেননি।  আপনি আগের চেয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করুন, পড়াশুনাতে আরও সিরিয়াস হোন দেখবেন আপনার পরীক্ষার রিজাল্ট এমনিতেই ভালো হচ্ছে।  আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়ে যাচ্ছে, তাহলে আপনার গার্লফ্রেন্ডকে বোঝান, নিজের অনুভূতিগুলো।  যদি সে আপনার আপনাকে বার বার এড়িয়ে চলে তাহলে তাকে যেতে দিন।  এটা আপনার Self-Respect (আত্মসম্মান)।  কারণ যে আপনাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসবে সে কখনও আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারবে না, আর যে চলে যাবে সে কখনও আপনার ছিল না।  এটা বিশ্বাস করুন।  সে কেন এমন করলো, কিভাবে এটা করতে পারলো এসব প্রশ্ন মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। 


অনেকেই বলেন, হতাশা বা ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে মেডিটেশন করার কথা।  কিন্তু আগেই বলেছি, বর্তমান অবস্থায় থেকে কেউ কখনো হতাশা বা ডিপ্রেশনে যেতে পারে না।  আর মেডিটেশন করার অর্থই হলো বর্তমানে থাকা।  মেডিটেশন আমাদেরকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখে এটা সত্যি।  কিন্তু এটাও সত্যি যে, আপনি যখন অলরেডি ডিপ্রেশনে থাকবেন তখন আপনি চাইলেও মেডিটেশন করতে পারবেন না।  একটা মানুষের জীবনে তার Passion এর চেয়ে বড় আর মূল্যবান অন্যকিছু হতে পারে।  তাই এসব ভাবনা গুলোকে দূরে রেখে নিজের শখ বা Passion এ মন দিন।  এখন এটা বলবেন না যে, আপনার কোনো শখ নেই।  কারণ পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যার কোনো শখ নেই।  যেমন- আমার শখ বই পড়া।  আমার যখন খুব মন খারাপ হয় কিংবা যখন অতিরিক্ত হতাশা ও বিষন্নতায় ভুগি তখন আমি আমার প্রিয় কোনো বই পড়ে থাকি।  চেষ্টা করি আমার পুরো মনোযোগ সেই বইয়ের মধ্যে দিয়ে দিতে।  যখন আমি বই পড়ি পড়তে থাকি তখন আমি সম্পূর্ণ অন্য পৃথিবীতে চলে যায়।  আর যখন ফিরে আসি তখন পুরোপুরি ভাবে স্বাভাবিক হয়ে যাই।  আমার মতো সবারই কোনো না কোনো শখ অবশ্যই আছে।  আপনি আপনার শখ বা Passion কে খুজে বের করুন।  হোক না সেটা, ছবি আঁকা, ভ্রমণ করা কিংবা নাচ-গান যাইহোক, সেটা আপনাকে খুজে বের করতে হবে।  যখন আপনার মন খারাপ হবে তখন আপনার পরিপূর্ণ মনোযোগ আপনার Hobby বা Passion এ দিন।  তাহলে আপনি সহজেই এই হতাশা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন।  আপনি শুধু এটা করেই আপনার ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 
আবার আপনি আপনার মোবাইলের কোনো চ্যালেঞ্জিং গেইম খেলতে পারেন।  কিন্তু অন্য উপায়গুলোতে কাজ হলে এটা না করাটাই ভালো কারণ এটাতে আপনার অনেক সময় নষ্ট হবে।  আর গেইমের প্রতি আসক্তি এসে যেতে পারে।  কিন্তু যদি আপনি শুধু আপনার হতাশা ও ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য করেন তাহলে এটা আপনার জন্য অনেক ভালো হবে।  আবার আপনি গান শুনতে পারেন মনের ডিপ্রেশন কাটাতে, কিন্তু কোনো বিরহের গান শুনবেন না।  কারণ বিরহের বা কষ্টের গান শুনলে আপনি আরও বেশি ডিপ্রেশনে চলে যাবেন।  শুধু একটাবার ভাবুন তো, আপনি এই পৃথিবীতে কেন এসেছেন? আল্লাহ কেন আপনাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন? কেন আপনি এই জীবন টা পেয়েছেন? দুদিনের জন্য আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি, তাহলে কেন শুধু শুধু নিজেকে হতাশা আর ডিপ্রেশনের মাঝে ডুবিয়ে রাখবেন? শুধু শুধু নিজেকে এই ডিপ্রেশনে রেখে আল্লাহর দেওয়া এই সুন্দর জীবনকে অপমান করবেন না।  নিজের মনকে বলুন -  হতাশা, ডিপ্রেশন বলে কিছুই হয় না।  আর সবসময় নিজেকে হাসি খুশি আর ব্যস্ত রাখুন।  ডিপ্রেশন এমনিতেই পালাবে।

Post a Comment

0 Comments