তেলাকুঁচো সম্পর্কে কিছু মজাদার তথ্য - Some Interesting Facts About Ivy Gourd



তেলাকুঁচো ফল আমাদের দেশের গ্রাম বাংলার যেখানে সেখানেই দেখতে পাওয়া যায়।  এটি একটি লতানো ভেষজ উদ্ভিদ।  এর বাংলা নাম "তেলাকুঁচো"।  ইংরেজীতে একে  ivy gourd, scarlet gourd, baby watermelon, little gourd, gentleman’s toes ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে।  স্থানীয়ভাবে একে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন - কুচিলা, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাহচি, তেলাহরা, কেলাকচু, তেলাকুচা বিম্বী সহ আরও অনেক নামে অঞ্চল ভিত্তিতে আরও অনেক নামে ডাকা হয়ে থাকে।  কিছু কিছু অঞ্চলে এটাকে সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়ে থাকে।  এটি সবুজ রঙের পাতা ও নরম কাণ্ড বিশিষ্ট একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।  এই গাছের পাতাগুলো দেখতে সবুজ ও পঞ্চভুজাকৃতির।  এই গাছটি প্রধানত দক্ষিণ এশিয়াতে দেখা যায়।  একেক দেশে একে একেক নামে ডাকা হয়ে থাকে।  বাংলাদেশে এটাকে আমরা তেলাকুঁচো বলে থাকি, নেপালে এই গাছকে বলা হয় কানক্রি।  এই গাছ লতানো হওয়ার সুবাদে বনে জঙ্গলে যেখানে সেখানে যেকোনো গাছের উপরেই বেড়ে ওঠে।  সাধারণত ছায়া জায়গাতে এই গাছগুলো জন্মে।  এর ফুল দেখতে অনেকটা তারার মতো এবং ৬-৮ সেমি লম্বা এবং ৭-৮ সেমি চওড়া হয়।  এবং এর একটি মাত্র পাপড়ি, সেটি দেখতে সাদা রঙের তবে সেটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত থাকে।  এর ফল দেখতে পটলের মতো এবং গায়ে সাদা ডোরা কাটা দাগ থাকে।  তবে পেকে গেলে এই ফল দেখতে একেবারে গাড়ো লাল রঙের হয়ে যায়।  এই ফলের ভেতরে ছোট ছোট বিচি আছে এবং খেতে অনেকটা শশার মতো।  এসব তো গেলো তেলাকুচোর পরিচিতি।  এখন তাহলে চলুন দেখা যাক, এই ফলের গুণাগুণ ও উপকারিতা কি কি আছে।

এই তেলাকুঁচো পাতা ও ফল ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।  ফল ও পাতার রস জ্বর, এজমা, ব্রঙ্কাইটিস, জন্ডিস, কুষ্ট রোগ নিরাময় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।  এটি খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  থাইল্যান্ডে বিভিন্ন তরকারি ও স্যুপে এর ফল ব্যবহার করা হয়।  এই ফল অত্যন্ত পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ।  বিশেষ করে এতে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম তেলাকুঁচোয় ১.৪ মিলি গ্রাম পরিমাণ আয়রন, ০.০৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রিবোফ্লাবিন), ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম ও ১.৬ গ্রাম আঁশ সহ প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে।  এই ফলে রয়েছে 'মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং', 'এনাফাইলেকটিক রোধী' এবং এন্টি হিস্টামিন জাতীয় উপাদান।

Foto di naturepost da Pixabay

এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, কি কি রোগে আমরা এটাকে কিভাবে ব্যবহার করতে পারি -
তেলাকুঁচোর পাতায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় আমাদের স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূর করে।  তেলাকুচোর পাতায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থায়ামিন থাকে যা আমাদের পরিপাকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে।  এবং আমাদের পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে।
  • ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে তেলাকুঁচোর পাতা কান্ড সহ ছেঁচে রস বের করে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে আধাকাপ করে খেতে হবে।  এর পাতা রান্না ও ভাজি করে খেলেও ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
  • জন্ডিস রোগের ক্ষেত্রে তেলাকুঁচোর শিকড় বা মূল ছেঁচে রস করে প্রতিদিন সকালে আধা কাপ পরিমাণ খেতে হবে।
  • সাধারণত সর্দী ও কাশি বসে যাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়, এর থেকে মুক্তি পেতে তেলাকুঁচোর মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে প্রতিদিন সকাল বিকাল ৩-৪ চা চামচ করে প্রতিদিন খেতে হবে।
  • শ্লেষ্মা কাশি উপশম করতে তেলাকুঁচোর মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে তাতে আধা চা চামচ করে মধু মিশিয়ে ১ সপ্তাহ সকাল ও বিকালে খেতে হবে।
  • শ্লেষ্মা-জ্বর এর ক্ষেত্রে ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ এর পাতা ও মূলের রস হালকা গরম করে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে খেতে হবে।  এর জন্য তেলাকুঁচোর পাতার পাটায় বেটে রস করতে হবে।
  • গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় বা অনেক সময় পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে পা ফুলে যায়, যাকে শোথ রোগ বলা হয়ে থাকে।  এর  থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে তেলাকুঁচোর মূল ও পাতার রস ছেঁচে ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ রস করে খেতে হবে।
  • নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসব করার পর অনেকের শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং স্তনে দুধ আসে না।  এরকম সমস্যায় পড়লে সবুজ তেলাকুঁচো ফলের রস ছেঁকে একটু গরম করে তার রস বের করে তার সাথে ২-৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে সকাল বিকাল দুইবার খেলে ৪-৫ দিন এর মধ্যেই স্তনে দুধ আসবে।
  • আমাশয় হলে তেলাকুঁচোর মূল ও পাতার রস প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ৩-৪ চা চামচ করে খেতে হবে।
  • খাবারে মুখে অরুচি হলে তেলাকুঁচোর পাতা একটু সিদ্ধ করে পানি ফেলে দিয়ে ঘি দিয়ে শাকের মত করে রান্না করতে হবে।  তারপর খেতে বসে প্রথমেই সেই শাক খেতে হবে।  এতে মুখে রুচি আসবে।
  • ব্রণ ও ফোঁড়ার ক্ষেত্রে এর রস বা পাতা ছেঁচে ফোড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ব্যবহার করতে হবে।


Post a Comment

0 Comments